ভারতবর্ষে প্রথমে মানুষের আবির্ভাব হয় খ্রিস্টপূর্ব তিন থেকে দুই লক্ষ বছরের মধ্যে। এটার প্রমাণ পাওয়া যায় দক্ষিণ ভারত এবং সোয়ান উপত্যকা অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রাগৈতিহাসিক পাথরের অস্ত্রশস্ত্র থেকে। আধুনিক হােমােসেপিয়েন্স মানুষের প্রথম আবির্ভাব ঘটে প্রায় ৩৬ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে। প্রাচীন প্রস্তর যুগে আদিম মানুষের অস্তিত্ব ছিল ৮০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ পর্যন্ত। তারা পাথরের অমসৃণ অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করত। তারা ছিল খাদ্যসংগ্রাহক এবং পুরােটাই প্রকৃতির উপর নির্ভর করত। ধীরে ধীরে তারা আগুনের ব্যবহার শেখে। যেটা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সহায়ক। 

৮০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে শুরু হয় ভারতের মধ্য প্রস্তর যুগ। এটি স্থায়ী ছিল ৪০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ পর্যন্ত। এই সময় তীক্ষ্ণ ও ধারালাে অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করা হত প্রাণীদের হত্যার জন্য। ছােটোনাগপুর মালভূমি, মধ্যভারত, দক্ষিণ ভারতের কৃষ্ণা নদী অঞ্চলের কিছু স্থানে মধ্যপ্রস্তর যুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে।

নব্য প্রস্তর যুগ শুরু হয় ৪০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে। নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ পশুকে পােষমানাতে শেখে এবং গৃহপালিত পশুর প্রচলন শুরু হয়। এছাড়া এই যুগে মানুষ খাদ্য উৎপাদন করতে শেখে এবং কৃষিকার্যের জন্য গ্রামে বাস করতে শেখে। মানুষ প্রথম কুকুরকে পােষ মানিয়েছিল। কিন্তু প্রথম গৃহপালিত (domesticate) পশু হল ভেড়া।নব্য প্রস্তর যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হল চাকার আবিষ্কার।


ব্রুস ফুটি (Bruce Fooety) ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে প্রাগৈতিহাসিক হাতকুঠার আবিষ্কার করেন আতিরাম পকম (চেন্নাইয়ের কাছে) থেকে। ভােপালের নিকট ভিমবেটকা গুহা আবিষ্কার করেন ভি. এস. অকাঙ্কের ১৯৭ ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে। ভিমবেটকা বিখ্যাত গুহাচিত্রের (Cave Painting) জন্য। এগুলি ১২ হাজার বছরের পুরানাে। প্রাগৈতিহাসিক শিল্পীরা এগুলি সায়েন্টিি সাদা ও লাল রং দিয়ে চিত্রিত করেন। স্যার জন লুবক (Sir John আলােক Lubook) নতুন প্রস্তর যুগ কথাটি ব্যবহার করেন। ভি গর্ডন চাইল্ড (V. Gordon Childe) নতুন প্রস্তরের সংস্কৃতিকে তা-প্রস্তরের সংস্কৃতি বলে বর্ণনা করেছেন। মেহেরগড় সভ্যতা হল ভারতের প্রাচীনতম | চতুঃসীমা সভ্যতা। ভারতবর্ষের কৃষিকাজের প্রথম নিদর্শন পাওয়া যায় মেহেরগড় সভ্যতায়। এখানে বিভিন্ন প্রকারের গম ও বার্লির নিদর্শন পাওয়া গেছে। মেহেরগড় সভ্যতার অবস্থান ছিল বেলুচিস্তানের বােলান নদীর তীরে কোচি উপত্যকায়। বুর্জাহাম (Burzahom) কথাটির অর্থ জন্মস্থান। এটি অবস্থিত শ্রীনগরে। এখানে কুকুরের সাথে মানুষের সমাধি পাওয়া গেছে। কোলডিহা (Koldiha) নামক স্থানে প্রথম ধান চাষের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখানে নব্য প্রস্তর যুগ, তাম্র-প্রস্তর যুগ ও লৌহযুগ এই তিন যুগের সংস্কৃতির নিদর্শন একসাথে দেখা যায়। কাশ্মীর উপত্যকার গুফরাল (Gufral) নামক স্থানে প্রাথমিক বাসনপত্রের (Pre Pottery) নিদর্শন পাওয়া গেছে। চোপ্রনিমান্ড (Choprimando) নামক স্থানে পৃথিবীর প্রথম বাসনপত্রের (Pottery) নিদর্শন পাওয়া গেছে। এটি বর্তমান বিহারে অবস্থিত। নতুন প্রস্তর যুগে মিলেটের (রানী) চাষ প্রথম করা হয়েছে দক্ষিণ ভারতে।

ভারতের লৌহ যুগ : ভারতে লৌহ যুগ শুরু হয়েছে ১০০০ থেকে ৫০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের মধ্যে। এটি বিস্তৃতিলাভ করে উচ্চগাঙ্গেয় উপত্যকা, মালব মালভূমি এবং তাপ্তি উপত্যকায়, বালুচিস্তান সমভূমি, মধ্য ও নিমগাঙ্গেয় উপত্যকা এবং উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল বিশেষত পেশােয়ার অঞ্চলে। ভারতবর্ষে প্রথম লােহার খোঁজ পাওয়া যায় উচ্চ গাঙ্গেয় উপত্যকায়। ৪০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে এই সংস্কৃতি পরিচিত ছিল পেন্টেড গ্রেওয়ার (Painted Grey Ware) নামে। কিন্তু তখন লােহার ব্যবহার ছিল সামান্য। খ্রিস্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে ব্যাপকহারে লােহার ব্যবহার চালু হয়। এর সাথে যুক্ত ছিল নর্দান ব্ল্যাক পােলিশ ওয়্যার (Northern Black Polished Ware) সংস্কৃতি। মালব অঞ্চলে এবং তাপ্তি উপত্যকায় নাগদা, ইরান, প্রকাশ ইত্যাদি অঞ্চলে লােহার ব্যবহার প্রাথমিক তাম্র-প্রস্তর যুগের ব্যাপক পরিবর্তন আনে। অহিসত্ৰ (Ahichhatra) বারাণসী, কোশাম্বী, শ্রাবন্তী এবং উজ্জয়িনী এই কয়েকটি স্থানে লৌহযুগের সভ্যতার প্রমান পাওয়া যায়।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন